শনিবার, ২৮ Jun ২০২৫, ০৯:০০ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ: মুন্নী আকতার এখন স্বাবলম্বী

বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ পরিচর্ষা করছেন মুন্নী আকতার-ছবি: কক্সবাজার ভয়েস।

আবদুল আজিজ: 

মুন্নী আকতার। সবজি চাষে ভাগ্যবদল হওয়া একজন নারী নারী কৃষকের নাম। ৩ সন্তানের জননী সে। এক সময় দিনে এনে দিনে খায়। স্বামী দিনমজুরের কাজ করে কোন রকম সংসার চালায়। সংসারে অর্থ জমানে অনেকটা স্বপ্নের মত। কিন্তু, এনজিও ওয়ার্ল্ড ভিশনের সহযোগিতায় বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত জমিতে সবজি চাষ করে আজ অনেক স্বাবলম্বী। সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। পাশের জমিতে লাউ, কুমড়া, করলা, লাল শাক, পুইশাক, বেগুন, আলো ও টমেটো সহ নানা প্রকার সবজির চাষ করেছে সে। এসব সবজি বিক্রি করে প্রতিমাসে মুন্নী আকতারের আয় হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের বটতলী কোনারপাড়া এলাকার সবজি চাষী মুন্নী আকতার তার সফলতার গল্প বলেছেন এ প্রতিবেদকের কাছে। মুন্নী আকতার জানান, ‘একই এলাকার স্বামী অলি আহমদকে বিয়ের পরপরই সংসারে দেখা দেয় অভাব-অনটন। স্বামী অলি আহমদ দিনমজুরের কাজ করে কোনভাবে সংসার ঠিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ওয়ার্ল্ড ভিশনের স্থানীয় এনজিও অফিসে গেলে সেখানে বাড়ির পার্শ্ববর্তী পরিত্যক্ত জমিতে সবজি চাষে অদ্ভোব্দ করেন। পরে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে বীজ ও কৃষি উপকরণ নিয়ে সবজি চাষ শুরু করেন। ফলে দুই মাসের মাথায় সফলতা পায়। এরপর আর ফিরে থাকাতে হয়নি। এভাবে বছরের পর বছর সবজি চাষ করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসে। এখন ৩সন্তান নিয়ে খুব সুখী মুন্নী আকতার।’

শুধু মুন্নী আকতার নয়। ওয়ার্ল্ড ভিশনের সহযোগিতায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৫ হাজারের বেশী নারী সংসারে এনেছে স্বচ্ছলতা। পরিবারের ভাগ্যবদল হওয়ায় সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে আজ তারা অনেক খুশি। উখিয়া ও টেকনাফে বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে মুন্নী আকতারের মত ৫ হাজারের বেশী নারীর। বাড়ির পরিত্যক্ত জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করে পরিবারে ভাগ্য বদল করতে পেরে আজ তারা অনেক খুশি। আর এসব নারীদের সবজির বীজ বিতরণ, প্রশিক্ষণ ও অর্থসহ নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন ওয়াল্ড ভিশন বাংলাদেশ নামের একটি এনজিও।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের উখিয়া অফিসের কর্মী আয়েশা আকতার কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, উখিয়া-টেকনাফের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহায় সম্বলহীন এসব পরিবারের কর্মহীন নারীদের বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষে প্রথমে উদ্ভোদ্ধ ও পরে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সবজি চাষে মনোযোগী করা হয়। পরে প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুইবার এসব উপকারভোগী নারীদের খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং সবজি পরিচর্ষা সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের উখিয়া অফিসের ফিল্ড অফিসার কৃষিবিদ আব্দুর রউফ কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় কর্মহীন নারীদের মাঝে নানা প্রকার সবজির বীজ, কৃষি উপকরণ ও প্রশিক্ষণের আওতায় এনে আর্থিক সহায়তা দেয় হয়েছে। এভাবে উখিয়ার জালিয়াপালং, রাজাপালং, পালংখালী ও টেকনাফের হ্নীলা এবং বাহারছড়া ইউনিয়নের ৫ হাজার ২২৯ জন নারীদের সবজি চাষের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

কৃষিবিদ আব্দুর রউফ আরও জানান, ‘বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফে যেসব নারীরা সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন, তাদের দেখাদেখি অন্য নারীরাও এগিয়ে আসছে। তাদের শুধু দুয়েকদিনের প্রশিক্ষণ শেষে সবজি চাষে মনোযোগী করলেই আর পেছনে ফিরে থাকাতে হয় না। তাদের শ্রম ও মেধা দিয়ে যেকোনভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এসব নারীরা।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ইউএসএআইিড’র অর্থায়নে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় ইমার্জেন্সী ফুড সিকিউরিটি প্রোগ্রাম (এফ.এফ.পি) প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টির অবস্থার উন্নয়নে পুষ্টি চাহিদা ও খাদ্যের গুনগত মান এবং দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া মানুষদের স্বাবলম্বী করা। একারণে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নে ১৩০২জন, রাজাপালং ইউনিয়নে ১২৩২জন পালংখালী ইউনিয়নে ৯১১জন ও টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নে ১০৩৩ জন ও হ্নীলা ইউনিয়নে ৭৮১জন সহ মোট ৫২২৯জন উপকারভোগী নারীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ সবজি চাষী হিসেবে গড়ে তোলেছে। বর্তমানে উক্ত প্রজেক্টেও মাধ্যমে ৪ বার বিভিন্ন ধরনের সিজোনাল (গ্রীষ্ম ও শীতকালীন) উন্নত শাকসবজির বীজ প্রদান করা হয়েছে। যেসব বীজ দেয়া হয়েছে, সেগুলো হল- লালশাক, ডাটা, পুইশাক, কলমিশাক, পালংশাক, মূলা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গে টেড়স, শসা, পিঁয়াজ, সীম, বরবটি ইত্যাদি। এছাড়াও এসব সবজি চাষ করার জন্য ব্যাক ¯েপ্র মেশিন, হাত ¯েপ্র মেশিন, বাঁশের ঝুড়ি, পানির ঝরনা, প্লাস্টিক বালতি, মগ,বসতবাড়ীর শাক-সবজি ঘেরার নেট, পানির কলসি ইত্যাদি প্রদান করা হয়েছে।

শুধু ওয়ার্ল্ড ভিশন নয়, তাদের মত এগিয়ে এসে কক্সবাজারের গ্রামীন জনপদে কর্মহীন নারীদের নানাভাবে সহযোগিতা করলে এসব অসহায় পরিবার গুলো স্বপ্নপূরণে অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এমনটি আশা সকলের।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION